দিন পেরিয়ে মাস। আর মাস পেরিয়ে বছর। শুধু এই একটা দিন তাদের নিজের। সারা বছরের ব্যস্ততাকে এক পাশে রেখে নিজেদের একটু সময় দেওয়া। কারো সাথে দেখা হয় না বছরের পর বছর। আবার কারো সাথে দেখা হয় মাঝে মাঝে। এভাবেই তো চলছে। তাদের সবার নিজের একটা পরিচয় আছে। তারা সবাই রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, ঢাকার সদস্য।
সকাল ৭.৩০। সবাই নিজ নিজ পরিবার নিয়ে হাজির সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। কারো পরনে লাল পাঞ্জাবি, কারো পরনে হলুদ টি-শার্ট, কারো পরনে শাড়ি, আবার কেউ পরে আছে সাদা শার্ট। বাহারি পোষাকে নিজেদের নতুনভাবে হাজির করেছেন সবাই।
বেলা ১০টায়। লঞ্চের এক পাশে সদস্যদের কেবিন বুঝিয়ে দিচ্ছেন আরডিজেএ এর অর্থ সম্পাদক আকতারুজ্জামান। সদস্যদের প্রত্যেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে কূপন এবং কেবিনের চাবি বুঝে নিচ্ছেন।
ঘড়ির কাটা তখন ১০টা ৩০ মিনিট। আচমকা একটা জোরে বাঁশি বাজল। লঞ্চ থাকা ছোট শিশুরা ‘হুর…রে..’ বলে লাফিয়ে উঠল। লঞ্চ চলছে। ছোট্ট ও বড় অনেক নৌকাকে কাটিয়ে মুন্সিগঞ্জের পথে যাচ্ছে বৃহৎ জলযান। এদিকে সম্মুখপানে উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা দু’পাশের সারি সারি দালানগুলো যেন বিদায় নিচ্ছিলো। লঞ্চ এগিয়ে চলছিল সুনসান নীরবতার দিকে।
লঞ্চের ভিতরের এবং বাইরের সৌন্দর্য আর বিভিন্ন ধরনের পাখির জলকেলি দেখতে দেখতে অনেক দূরে এসে থামল লঞ্চ। এর মাঝে লঞ্চের নিচতলায় চলছে নারী ও শিশুদের খেলা। তবে এগুলোর চেয়ে উপস্থিত আরডিজেএ পুরুষ সদস্যরা প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতেই বেশি ব্যস্ত। মাথার উপর সুবিশাল নীল আকাশ। সঙ্গে ভেসে বেড়াচ্ছে গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ। সূর্যটাও মেঘ সরিয়ে মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে। নদীর বুকে বয়ে চলছে লঞ্চ। মৃদ মৃদ বাতাঁস এসে দোলা দিচ্ছে। এমন দৃশ্য কার না ভালো লাগে।
এগুলো দেখতে দেখতে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা হল দেশের স্বনামধন্য ইলেক্ট্রনিক পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জসীম উদ্দীনদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতির এই মিলনমেলা বরাবরই ভালোই লাগে। তবে এবার ব্যক্তিগত কাজ ছিল। একেবারে শেষ মুহুর্তে এসেছি এখানে। ভালো লাগছে। লঞ্চের এক পাশে কেবিন হওয়ায় আমার ভালো হয়েছে। সব মিলে দারুণ। পরিচিত অপরিচিত অনেকেই দেখে ভালো লাগছে। সব মিলে দারুণ ভ্রমণ। ‘
এগুলো বলতে বলতে ঘড়ির কাটা তখন বাজে দুপুর ২টা। দুপুরের খাবারের প্রস্ততি চলছে। খাবারের সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। সবাই পরিবার নিয়ে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছে। টেবিলের সংকটের কারণে দ্বিতীয় ধাপে বসল সদস্যরা।
এরই মাঝে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হল দেশের স্বনামধন্য আরেক ইংরেজি দৈনিকের নিজস্ব প্রতিবেদক সজিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নৌবিহারের মাধ্যমে আজ আমাদের মিলনমেলার মতো সৃষ্টি হয়েছে। গত বছরেও এসেছিলাম। পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো লাগছে। এবারও দারুণ। ঢাকায় থাকা বিভাগের সব গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে এক সাথে খাওয়া দাওয়া করা দারুণ। আগামী দিনের পথচলায় সবাইকে একত্রে এভাবে পথ চলতে হবে।’
দুপুরের খাওয়া পর লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ল। এর মাঝে উপস্থিত সদস্যদের নিয়ে র্যাফেল ড্রয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হল। বিকাল ৪টা ৩০মিনিটে সদরঘাটে এসে লঞ্চ থামল। যার মাধ্যমে শেষ হলো স্মৃতিময় এক দিনের। যে দিনের গল্পগুলো স্মৃতির মণিকোঠায় থেকে যাবে আজীবন।